আজাদ ও পাউরুটির গল্প

 

আজাদ ওর আম্মুর সাথে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটাতে এসেছে। ছোটবেলায় আজাদ করতো কী, জানো? যা দেখতো তা-ই কিনতে চাইতো- কিছু একটা দেখলেই বায়না করা শুরু করতো-

 

-রাহাত ভাইয়ার দুই কাঁটা ওয়ালা পেনসিল আছে- আমারও লাগবে আম্মু উঁ উঁ…

 

-পেনসিল কম্পাস দিয়ে অনেক কিছু আঁকা যায় আজাদ। কিন্তু তুমি এখনও ছোট। ওটার ধারালো কোণা আছে, দেখছো না? আঁকতে গেলে চোখে লেগে যেতে পারে। আরেকটু বড় হও, কিনে দেবো।

 

-না আমার লাগবে উঁ উঁ…

 

আবার একটু পর হয়তো একটা বারবি ঘড়ি দেখলো- আড়চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলতো- আমার ঘরে শুদু নীল ঘড়ি। গুলাপী ঘড়ি কত সুন্দর। রাইয়ানের বারবি ঘড়ি আছে, আমার বুঝি থাকতে নেই? আম্মু, শুনছো?

 

অবশেষে আম্মু একটু রাগ রাগ গলায় বলতো-

 

-আ…জা…দ! এমন যদি করো- আর কোত্থাও নিয়ে যাবো না কিন্তু! যা কিছু দেখবে সব কিনতে চাইতে হয় না। তাহলে লোকজন পঁচা বলবে তোমাকে। আল্লাহও মন খারাপ করবেন। কারণ, প্রয়োজন ছাড়া অনর্থক কেনাকাটা অপচয়। অপচয়কারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন না!

 

এখন অবশ্য আজাদ বড় হয়েছে। এই নভেম্বরে ওর বয়স নয় হবে! সবকিছু বুঝতে পারে এখন। তাছাড়া ওর একটা ছোট্ট ভাই হয়েছে না? আম্মু বলেছে, আজাদ যা কিছু করবে সব কায়সার শিখে ফেলবে। তাই তো এখন আজাদ কায়সারকে দেখিয়ে দেখিয়ে দিনে তিনবার দাঁত ব্রাশ করে। আগে তো আজাদকে দিয়ে দাঁত ব্রাশ করানো এত কঠিন কাজ ছিলো! ঠোঁটের উপর একটুখানি দুধ লাগিয়ে বাকী দুধটা বেসিনেও ফেলে দেয় না, কারণ এইটা যে পঁচা কাজ, আম্মুকে ঠকানো- এখন আজাদ বুঝে গেছে। কায়সার এখনো সব কথা বোঝে না- কিন্তু আজাদ ভেবে রেখেছে যেদিন থেকে কায়সার কথা বুঝতে পারবে- সেদিনই ওকে বলে দিতে হবে কখনো যেন আম্মুকে না ঠকায়। তাতে আল্লাহ রাগ হবেন। যাহোক, কী যেন বলছিলাম? ও! আজাদ ওর আম্মুর সাথে স্টোরে এসেছে কেনাকাটা করতে। আজাদ ওর আম্মুকে জিজ্ঞেস করছে,

 

– আচ্ছা, আমরা পাউরুটি কিনলাম। স্টোরকিপার আঙ্কেলকে টাকা দিলাম। আমরা পেলাম পাউরুটি, উনি পেলেন টাকা। কিন্তু পাউরুটিটা কী পেলো আম্মু?

 

– হুম। চিন্তার বিষয় ত! জবাব দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে তুমি বলতো পাউরুটি নিয়ে তুমি কী করবে?

 

-খাবো।

-কেন খাবে?

-মজা লাগে, এইজন্য!

 

-হাহা… হুম। সেটা একটা কারণ। আরো কারণ আছে ভেবে দেখ তো! আমরা কি শুধু মজা পাওয়ার জন্যই খাই?

 

– ভেব নি-ই। আচ্ছা, পাউরুটিটা খাবো এইজন্য যে এটা থেকে কার্বোহাইড্রেড পাবো- যা থেকে আমার শরীরের ভেতর শক্তি তৈরি হবে। সেই শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারবো। খেলতে পারবো, পড়তে পারবো, হাঁটতে পারবো, কথা বলতে পারবো, এই তো, না?

 

-মাশাআল্লাহ! ঠিক তাই। তুমি খেয়ে ফেলার পর পাউরুটিটাও তোমার দেহের একটা অংশ হয়ে যাবে। পাউরুটিটা কী পাবে জানো? পাউরুটিটা আনন্দও পেতে পারে, কষ্টও পেতে পারে! তুমি যদি পাউরুটিটা খেয়ে যে শক্তি পাবে তা বাজে কাজে ব্যবহার করো- তাহলে পাউরুটিটা কষ্ট পাবে। আর যদি ভালো কাজ করো তাহলে সে আনন্দ পাবে। যদি তুমি খাবার থেকে পাওয়া শক্তি ভালো কাজে ব্যয় করো তাহলে একদিন- এই পাউরুটিটাই আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলবে- আল্লাহ আজাদ আমাকে খেয়ে শক্তি নিয়ে ভালো ভালো কাজ করেছে। তুমি আজাদকে তার পুরষ্কার দাও। আর যদি খারাপ কাজ করো তাহলে বলবে- আজাদ আমার থেকে শক্তি নিয়ে তা বাজে কাজে ব্যয় করেছে- তুমি ওকে শাস্তি দাও।

 

-পাউরুটি কথা বলতে পারবে মা?

 

-হুম। কারণ, এইদিন আল্লাহ যাকে চাইবেন কথা বলার শক্তি দেবেন। এটা কোন দিন তুমি জানো?

 

-হ্যাঁ, জানি। আমরা জান্নাতে যাবো নাকি জাহান্নামে যাবো সেটা বিচার করার দিন এটা।

 

আম্মু আজাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আম্মুটা যে কী! আজাদের পরিপাটি চুলগুলোকে মাঝে মাঝে আদর করে একদম এলোমেলো করে দেন। আজাদ অবশ্য আজকে এলোমেলো চুল নিয়ে ভাবছে না। সে ভাবছে অন্য কিছু নিয়ে। এই যে, তুমি! যে এই গল্পটা পড়লে, তুমিও কি অন্যকিছু ভাবছো?

 

[এটা একটা শিশুতোষ গল্প। সাত থেকে দশ বছর বয়েসী শিশুদের জন্য লেখা]

Post a Comment

أحدث أقدم