লোভের পরিণাম
একদিন একজন ইহুদী এসে হয়রত ঈসা (আঃ) কাছে আরয করলো, “হুযুর, আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। আপনার সংসর্গ আমার খুব ভালো লাগে।“শুনে হয়রত ঈসা (আঃ) তাকে সঙ্গী করে নিলেন। তারা চলতে চলতে একটি ছোট্ট শহরের প্রান্তে গিয়ে পৌঁছালেন। হয়রত ঈসা (আঃ) এর সঙ্গে তিনখানা রুটি ছিল। দুজনই ক্ষুধার্ত।তৃপ্তির সঙ্গে তারা দুটো রুটি খেলেন। তৃতীয়টি ইহুদী লোকটির কাছে রেখে হয়রত ঈসা (আঃ)কিছু সময়ের জন্য অন্যত্র গেলেন। ফিরে এসে তিনি রুটিখানার খোঁজ করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “রুটিখানা কোথায়?” উত্তরে ইহুদী চোখে মুখে বিস্ময়ের ভাব এনে বলল, “আমি রুটি খাইনি। আমি আপনার রুটি সম্পর্কে কোন খবর জানি না।”
ঈসা (আঃ) আর কোন কিছু না বলে ইহুদীকে সঙ্গে করে চলতে লাগলেন। সামনে এক নির্জন বন। বনের গাছপালায় ঢাকা পথ ধরে চলছেন দুজন। হয়রত ঈসা (আঃ) হঠাৎ দেখলেন, একটা হরিনী দুটো শাবক নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ঈসা (আঃ) একটা ছানাকে তার কাছে ডাকলেন। ছানাটি আল্লাহর নবীর ডাক শুনে তার কাছে ছুটে এলো। তিনি শাবকটিকে ধরে ফেললেন এবং আল্লাহর নামে জবাই করলেন। অতপর আল্লাহর অপার মহিমায় শাবকটি তৎক্ষনাত ভাজা হয়ে গেল। তারা দুজন পেট ভরে হরিণের কচি গোশত গেলেন। খেয়ে খুব তৃপ্ত ইহুদীটা। এবার হয়রত ঈসা (আঃ) বললেন, “হে হরিণ শাবক! জীবিত হয়ে যাও তুমি।” তৎক্ষণাত ওটা জিন্দা হয়ে তার মায়ের কাছে ফিরে গেল। ব্যাপারটা দেখে ইহুদীটা একটুও বিস্মিত হলো না। ঈসা (আঃ) এমন মুজিযা তার কঠিন মনকে নরম করতেপারলো না।
পথ চলতে চলতে ঈসা (আঃ) ইহুদীটার হাত ধরে বললেন, “ তোমাকে আল্লাহর কসম। আমার এ অলৌকিক কাজ দেখার পরও কি তোমার মনে আল্লাহর ভয় আসছে না? সত্যি করে বলো, তৃতীয় রুটিখানার কি হয়েছে?” কিন্তু উত্তরে পাষাণ হৃদয় ইহুদী বলল, “আমি আপনার রুটির কথা কিছুই জানি না।“
ঈসা (আঃ) তাকে আর কিছু না জিজ্ঞেস করে আবার পথ চলতে লাগলেন। তারা বন পেরিয়ে একটি বালুকাময় প্রান্তরে পৌঁছালেন। আল্লাহর নবী কিছু বালু একত্র করে একটা স্তূপ বানিয়ে বললেন, “হে বালুকারাশি। আল্লাহর হুকুমে সোনা হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে বালুর ঢিবি সোনায় রুপান্তরিত হয়ে গেল। এবার আল্লাহর নবী পিন্ডটাকে ভেঙ্গে তিন ভাগ করলেন এবং বললেন, “হে ইহুদী! এ তিনটি পিন্ডের একটা পিন্ড আমার, একটা তোমার আর তৃতীয় পিন্ডটা তার, যে রুটি খেয়ে ফেলেছে।”
সোনার লোভে ইহুদীর চোখ চকচক করতে লাগলো।সঙ্গে সঙ্গে নিজের পোটলা থেকে তৃতীয় রুটিখানা বের করে বললো, “এই যে আপনার রুটি। এটা এতক্ষণ আমার কাছেই ছিল।” সোনার লোভে ইহুদী সত্য কথা বলে। তখন ঈসা (আঃ) বললেন, “তুমি যখন সত্য কথা স্বীকার করেছ, তিনটা পিন্ডই তোমার।” একথা বলে ঈসা (আঃ) ওকে ছেড়ে অন্য পথে চলে গেলেন।
সোনার তিনটি পিন্ড নিয়ে কিছু পথ চলার পর হঠাৎ করে ইহুদীর সামনে দুজন দুর্ধর্ষ ডাকাত হাজির হলো। ডাকাতদের দেখেই ইহুদী ভয়ে কাঁপতে লাগলো। সে তাদের বললো, “আমাকে প্রাণে মেরো না। তিনটি খন্ড তো আছেই। কেননা আমরা একজন এক এক খন্ড করে নিয়ে যাই।”
ডাকু তাকে হুঙ্কার ছেড়ে বললো, “সে কথা পরে হবে। বেশ খিদে পেয়েছে। আগে তুই আমাদের জন্য খাবার কিনে আন।” মনে মনে ডাকাতরা ফন্ধি আটলো যে, ইহুদীটা খাবার নিয়ে এলেই তাকে খতম করে ফেলা হবে। না হলে সে আবার সোনার ভাগ চাইবে। অন্যদিকে ইহুদীটাও ফন্ধি আটলো। সে খাবার কিনে তাতে বিষ মিশিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যেই ইহুদীটা খাবার নিয়ে এলো ডাকাতরা তার কাছ থেকে খাবারগুলো নিয়ে তাকে হত্যা করলো। অতপর তারা খাবারগুলো খেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর তারা বিষে ছটফট করতে লাগলো এবং মুখে ফেনা তুলে তারা দুজনই মারা গেল।
তিনটি লাশ পড়ে রইলো তিনটি সোনার পিন্ডের পাশে কিন্তু হাত বাড়িয়ে নেয়ার কেউ নেই। অতি লোভের পরিণাম যে কি ভয়াবহ তা আল্লাহ ঈসা(আঃ) এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছেন।
উৎসঃ ছোটদের হয়রত ঈসা (আঃ)। পৃষ্ঠাঃ ২৯ থেকে৩৩। [কিছুটা পরিমার্জিত ও সংক্ষিপ্ত।]
Post a Comment